বগুড়া এয়ারপোর্ট (বিমানবন্দর) চালু করতে হলে প্রয়োজন সর্বনিম্ন ৬ হাজার ফুট রানওয়ে, তবে আছে এখন ৪৭০০ ফুট। এটি চালু হলে অর্থনৈতিক পরিসর আরও সমৃদ্ধ হবে। দেশের নবম বিমানবন্দর হিসেবে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে এমনটা মন্তব্য করেছেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) বগুড়ায় বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, এ বন্দর নিয়ে আগের সরকারকে একাধিকবার প্রস্তাব দিলেও কোনো গুরুত্ব দেয়নি তারা। আমরা নতুন করে সরকারকে প্রস্তাব দিব। বাজেট পেলেও স্বল্প পরিসরে চালু করতেও কমপক্ষে একবছর সময় লাগবে।
জানা গেছে, বগুড়ায় বিমান বন্দর চালুর বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন হয়। এরপ্রেক্ষিতে গত ১২ জানুয়ারি সরেজমিনে বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন বিমান বাহিনী প্রধান চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। পরিদর্শন শেষে বিমানবন্দর চালুর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৮৭ সালে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। এরপর ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে এখানে বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ জন্য ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা হয়। ২০০০ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। কিন্তু ২৮ বছরেও বাণিজ্যিকভাবে বিমান আর ওড়েনি এ বিমান বন্দর থেকে। এরপর বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে বেবিচক।
বগুড়া-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলুর প্রস্তাবনার আলোকে সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদনসহ মতামত দিতে বলা হয় কমিটিকে। কমিটির সদস্যরা বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেন। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে সে আবেদনটি আমলে নেওয়া হয়নি। তবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে এবার সেটিও আমলে নেওয়া হবে।
তৎকালীন সাবেক সাংসদ রেজাউল করিম বাবলু বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচলের জন্য নব্বইয়ের দশকে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় প্রায় ১১০ একর জায়গাজুড়ে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়। আন্তর্জাতিক মানের এই বিমানবন্দর নির্মাণে খরচ হয় ২২ কোটি টাকা। কিন্তু ২৮ বছরেও বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়নি। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রাজধানী বলে খ্যাত বগুড়া শিল্প, শিক্ষা, ও ব্যবসা-বাণিজ্যে দেশের অন্যান্য জেলার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিমানবন্দর চালু হলে শুধু বগুড়া নয়, পুরো উত্তরাঞ্চলে উন্নয়নের পরিবর্তন ঘটবে।