বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সেরুয়া গ্রামের বাসিন্দা রিয়াজুল (৫৭)। হার্টের জটিল সমস্যায় ভুগছেন তিনি। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে ৭ শতক জমি বিক্রি করার জন্য ইতিমধ্যে ৩ লাখ টাকা বায়না নিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশে যেতে হচ্ছে তাকে। পাসপোর্ট ভিসা প্রস্তুত হয়েছে, এখন দরকার টাকা। অথচ জমি দলিল করে দিতে না পারায় ক্রেতা বাঁকি টাকা দিচ্ছেননা। এদিকে ভূমি অফিসে খাজনা দিতে না পারার ফলে দলিল করে দিতে পারছেননা জমিও। গত ২৬ নভেম্বর থেকে অদ্যবধি অনলাইনে ভুমিসেবা সার্ভারটি বন্ধ থাকায় জমির নামজারি, খাজনা আদায়, জমির ই-পর্চা সেবা, ভূমি উন্নয়ন করসহ অনলাইন ভূমিসেবার সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যারফলে রিয়াজুলের মত ভোগান্তিতে পড়েছেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বহু মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে সেবাপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মাসখানেক আগে জমি খারিজের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলাম। সার্ভার জটিলতায় নায়েব প্রস্তাবনা দিতে পারেননি। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ায় আবার আবেদন করতে হয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে এই ভূমি অফিসে ঘুরছি। এখনও নাকি প্রস্তাবনা দেওয়া যাচ্ছেনা। কবে নাগাদ এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পাব অফিস কিছুই বলতে পারছেননা।’
শেরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়সূত্র জানায়, গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ই-মিউটেশন সিস্টেম, ই-পর্চা সিস্টেম এবং ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। পরে ১ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় পরীক্ষামূলক চালু করা হয়। এখন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা গেলেও অ্যাকাউন্টে লগইন জটিলতায় স্থবির হয়ে পড়েছে ভূমি সেবা।
শেরপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান বলেন, ‘জমি রেজিস্ট্রি করার ক্ষেত্রে অনলাইন থেকে যেসকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় এখন তা পাওয়া যাচ্ছেনা। এরফলে দৈনন্দিন জমি রেজিস্ট্রির সংখ্যা একেবারে কমে গেছে।’
শেরপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের স্ট্যাম্প ভেন্ডর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ২মাস যাবৎ জমির কেনাবেচা অনেক কমে গেছে। দলিল রেজিস্ট্রিও তলানীতে নেমেছে।
কয়েকজন দলিল লেখক জানান, কারিগরি কিছু ক্রটির কারণে নামজারি ও খাজনা আদায় করা যাচ্ছে না। এতে করে আগে যাদের নামজারি ও খাজনা খারিজ করা ছিল এখন শুধু তাদেরই জমির রেজিস্ট্রি হচ্ছে।
শেরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম বলেন, ‘জনসাধারণকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোগান্তিমুক্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই সার্ভার আপগ্রেডেশনের কাজ চলছে। ফলে ভুমি সেবা সার্ভারে সামময়িক সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। খুব দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে।