প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি ব্যাগ হচ্ছে ফ্যাশন অনুষঙ্গ। অনেকের তো ব্যাগের প্রতি রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। অনেকটা এমন যে পোশাক সাদামাটা হোক, ব্যাগ হওয়া চাই নজরকাড়া। পেশা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে সবাই বেছে নেন পছন্দ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাগ। এখন তরুণ-তরুণীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টোট ব্যাগ।
টোট ব্যাগ আকারে বড় হয় এবং হাতল হয় মাঝারি থেকে বড়। এই ব্যাগের আকার চতুর্ভুজ, ত্রিভুজ, গোলাকার আবার অর্ধবৃত্তাকার হয়ে থাকে। টোট ব্যাগ এখন বেশ সাড়া জাগালেও এর ব্যবহার কিন্তু বহু আগে থেকে। ১৮ শতকের দিকে স্কুলের মাস্টারমশাই কিংবা সুতি শাড়ি পরে দুই বেণি করা চটপটে কিশোরীর কাঁধে ঝুলতে দেখা যেত ওভারসাইজড এসব টোট ব্যাগ।
মডেল: আফি আফরোজ, পোশাক: তরী
এরপর বাজারে আসে আরও হরেক রকমের ব্র্যান্ড ও নকশার ব্যাগ। যার ফলে টোট ব্যাগ অনেকটা হারিয়ে যায়। কিন্তু প্রতিটি হারিয়ে যাওয়া পুরাতন ফ্যাশনই বারবার ফিরে এসেছে। বলা চলে হারিয়ে যাওয়া এই অনুষঙ্গটিও ফিরে এসেছে সবার কাঁধে কাঁধে।
চামড়া, ডেনিম, পাট দিয়ে টোট ব্যাগ তৈরি করা হয়। টোট ব্যাগকে আকর্ষণীয় করার জন্য এর ওপর নানা ধরনের নকশা করা হয়ে থাকে। সেই সব নকশা করা হয় রং-তুলি দিয়ে হাতে কিংবা স্ক্রিন প্রিন্টের মাধ্যমে। টোট ব্যাগ মূলত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নজরকাড়া সব নকশার জন্য। কখনো ব্যাগের ওপর করা হচ্ছে রিকশা প্রিন্ট, কখনো কার্টুন, লতাপাতা কিংবা পছন্দের গান বা কবিতার লাইন। এ ছাড়া জামদানি মোটিফ ও নকশি কাঁথা ডিজাইনের টোট ব্যাগও দেখা যায়। অনেক সময় টোট ব্যাগের ওপর সুই-সুতার কাজ করে ডিজাইন করা হয়ে থাকে।
মডেল: আফি আফরোজ, পোশাক: তরী
নিজের সৃজনশীলতার মাধ্যমে বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে টোট ব্যাগকে আকর্ষণীয় করে তুলছেন। এ ছাড়া কিছু কিছু জায়গায় ক্রেতারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন কাস্টমাইজ করে নিতে পারছেন। টোট ব্যাগের আকার ও ডিজাইন অনুযায়ী নারী-পুরুষ উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন। টোট ব্যাগ হরেক রঙের হলেও সাদা আর কালো রঙের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ এই দুটি রং যেকোনো পোশাকের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায়। বেশির ভাগ টোট ব্যাগে জিপার থাকে না কিন্তু ব্যবহারের সুবিধার কথা চিন্তা করে জিপার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য টোট ব্যাগ বেশ উপকারী। টোট ব্যাগ সাইজে বড় হওয়ার জন্য যেকোনো জিনিস খুব সহজে বহন করা যায়। অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য পেয়েছে টোট ব্যাগ। যার মধ্যে বই-খাতা, পানির বোতল, টিফিন বক্স, ফাইল ইত্যাদি খুব আরামে বহন করা যায়। যারা ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন তারাও হাতে রাখতে পারেন টোট ব্যাগ। এতে জরুরি ওষুধ, ফোনের চার্জার, নোট বুকসহ সব দরকারী জিনিস বহন করা যেতে পারে। অনেক টোট ব্যাগের বাইরে কিংবা ভেতরে পকেট দেয়া হয়; এতে চাবি, কলম ইত্যাদি খুঁটিনাটি রাখা যায়। মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় টোট ব্যাগ। ছেলেরা যাত্রাপথে বেশি টোট ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে। একটি টোটে ব্যাগের মধ্যে সব প্রয়োজনীয় জিনিস বহন করা যেতে পারে। এক কথায় যারা আরাম ও ফ্যাশন দুটোই চায় তাদের জন্য টোট ব্যাগ সবচেয়ে উপযুক্ত। টোট ব্যাগের আরেকটা সুবিধা হলো- এটা নোংরা হয়ে গেলে পরিষ্কার করার জন্য ধোয়া যায়, এতে ব্যাগের কোনো ক্ষতি হয় না।
টোট ব্যাগ যেকোনো পোশাকের সঙ্গে নেয়া গেলেও কুর্তি, টি-শার্ট এবং শাড়ির সঙ্গে বেশ মানানসই। এখন লম্বা কামিজ এবং ওভারসাইজ পোশাকের খুব চল। আর এসব পোশাকের সঙ্গে টোট ব্যাগ নিয়ে নিজেকে আরও বেশি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। এ ছাড়া অনেক ছেলেরা পাঞ্জাবির সঙ্গে টোট ব্যাগ ব্যবহার করে থাকেন। যেকোনো সাজের সঙ্গে টোট ব্যাগ দিতে পারে নান্দনিকতার স্পর্শ। কিন্তু টোট ব্যাগ সাদামাটা হওয়ার কারণে খুব জমকালো আয়োজন অনেকে নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাই টোট ব্যাগ এখনো নিত্যদিনের ব্যবহার ও দেশীয় পোশাকের মধ্যেই আটকে রয়েছে। কিন্তু এখন অনেকেই ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গে নান্দনিক সব ডিজাইনের টোট ব্যাগ ব্যবহার করছেন।
টোট ব্যাগের ব্যবহার অনেকটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কদর বেড়ে গিয়েছে সবার মাঝে। তাই সবার চাহিদার কথা চিন্তা করে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো তুলছে হরেক রকম ডিজাইনের টোট ব্যাগ। কোনো কোনো ফ্যাশন হাউস পোশাকের নকশার সঙ্গে মিল রেখে টোট ব্যাগ ডিজাইন করছে। আড়ং, দেশাল, যাত্রা, কইন্যা, পটের বিবিসহ আরও অনেক দেশীয় ব্র্যান্ড পাওয়া যাচ্ছে এসব ফ্যাশন হাউসগুলোতে। কিন্তু টোট ব্যাগের সবচেয়ে বেশি দেখা মিলে অনলাইনভিত্তিক পেইজগুলোতে। যারা হ্যান্ডপেইন্ট করতে ভালোবাসেন অনেকে টোট ব্যাগের ওপর নিজের মনের মতো নকশা করে অনলাইনের মাধ্যমে সবার হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন। টোট ব্যাগ সবার কাছে জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে এর দাম তুলনামূলক হাতের নাগালে। ব্র্যান্ড ও নকশার ওপর নির্ভর করে ৩৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মধ্যে পাওয়া যায় টোট ব্যাগ।