প্রায় ৬ মাসের ব্যবধানে বগুড়ায় আবারো একসাথে চার পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন জান্নাতি আক্তার জুই (৩৫) নামের এক নারী। বর্তমানে মা ও নবজাতকরা সুস্থ আছেন এবং তারা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে বগুড়ায় একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন অনন্যা মোদক নামের এক নারী। তবে এ নিয়ে গত ৬ মাসের ব্যবধানে বগুড়ায় পৃথক দু’জন নারী ৪টি করে জমজ সন্তানের জন্ম দিয়ে চাঞ্চল্যতার সৃষ্টি করে।
শুক্রবার(২৫এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মনোয়ারা খাতুন ।
জুই বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাহারপুকুর গ্রামের বাসিন্দা এবং তিনি সৌদি প্রবাসী শরিফুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের একটি ৮ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। গত বছর জান্নাতি আক্তার জুই ওমরাহ হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যান এবং সেখানে স্বামীর সঙ্গে কিছুদিন অবস্থান করেন। এরপর তিনি গর্ভবতী অবস্থায় দেশে ফেরেন।
জুইয়ের খালা মোসলেমা বেগম জানান, শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে রাতেই চিকিৎসকরা সফলভাবে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে চারটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। একসাথে চার সন্তান জন্ম নেওয়ার খবরে জুইয়ের স্বামী শরিফুল ইসলাম অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
ডা. মনোয়ারা খাতুন আরও বলেন, গর্ভাবস্থায় জুই সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে বাসায় বিশ্রামে ছিলেন। প্রসব ব্যথা শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, গর্ভে চারটি সন্তান রয়েছে এবং তাদের বয়স ৩২ সপ্তাহ। রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুকূলে না থাকায় নির্ধারিত সময়ের পাঁচ সপ্তাহ আগেই সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। বর্তমানে মা ও চার নবজাতক সুস্থ রয়েছেন এবং নবজাতকদেরকে শিশু ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে বগুড়ায় একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন অনন্যা মোদক নামের এক নারী। শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তাদের জন্ম হয়। এমন তথ্য জানিয়েছিলেন ডা. মনোজ্ঞ চিত্রলেখা গুহ।
অনন্যা মোদক ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর চা দোকানি রতন মোদকের স্ত্রী। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে বগুড়া শহরেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।
এ নিয়ে গত ৬ মাসের ব্যবধানে বগুড়ায় পৃথক দু’জন নারী ৪টি করে জমজ সন্তানের জন্ম দিয়ে চাঞ্চল্যতার সৃষ্টি করে।
এর আগে জেলার শেরপুরে একসঙ্গে তিনকন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে লাবনী নামের এক গৃহবধূ। লাবনী আক্তার পৌরশহরের গোসাইপাড়া এলাকার সাকিল খানের স্ত্রী। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ হয় শাকিল ও লাবনী দম্পতির তিন কন্যা শিশু। বর্তমানে তারা সবাই সুস্থ্য রয়েছে। তিন কন্যা সন্তানের নাম রাখা হয়েছে হোমায়রা, লাবীবা ও আফিফা।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলেছে, মায়ের দেহে সাধারণত একই সময়ে একটি মাত্র ডিম্বাণু দুটি ডিম্বাশয়ের যে কোনো একটি থেকে নির্গত হয়। যদি দুটি ডিম্বাশয় থেকেই একটি করে ডিম্বাণু একই সময়ে নির্গত হয়, তবে ওভ্যুলেশন পিরিয়ডে তার শরীরে মোট দুটি ডিম্বাণু থাকে। এ সময় মিলন হলে পুরুষের শুক্রাণু উভয় ডিম্বাণুকেই নিষিক্ত করে। একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু প্রথমে দুটি পৃথক কোষে বিভক্ত হয়। পরবর্তী সময় প্রতিটি কোষ থেকে একেকটি শিশুর জন্ম হয়। কখনো কখনো দুটি বা তিনটি ডিম্বাণু একই মাসিকচক্রের সময়ে নিষিক্ত হলে দু-তিনটি বাচ্চা একই সঙ্গে হতে পারে। বিশ্বে সর্বাধিক আটটি শিশু একই সঙ্গে ভূমিষ্ঠ হওয়ার রেকর্ড আছে। এই বহু সন্তান হতে পারে বহু ডিম্বাণু থেকে, আবার হতে পারে একটিই ভ্রূণ বিভক্ত হওয়ার মাধ্যমে। তবে বহু ডিম্বাণু থেকে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এসব শিশু সবসময় একই লিঙ্গের নাও হতে পারে এবং তারা দেখতে ভিন্নও হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাইনী ও অব্স বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনসূয়া রায় জানান, একাধিক শিশু জন্ম গ্রহনে অনেক সময় পারিবারিক ইতিহাস থাকে। তবে একাধিক শিশুর গর্ভধারণকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মাল্টিপল প্রেগনেন্সি বলা হয়। সাধারণত যমজ, ক্ষেত্রবিশেষে তিনটি (ট্রিপলেট), চারটি (কোয়াড্রুপলেট) কিংবা আরও বেশি সন্তান ধারণের ঘটনাও হতে পারে।
একাধিক শিশু জন্ম কেন হয়, এমন প্রশ্নে ওই চিকিৎসক জানান, পারিবাবির কারণ ছাড়াও আমাদের দেশে বন্ধ্যাত্বে যে চিকিৎসা রয়েছে। তাতে করে রোগীর গর্ভাশয়ে ডিম্বাণু ফোঁটানোর জন্য আমরা মেডিসিন প্রয়োগ করে থাকি। সেক্ষেত্রে মেডিসিনের পরিমাণ কখনো বেশী হয়ে গেলে বা দুইয়ের অধিক ডোজ প্রয়োগে ডিম্বাণু তত পরিমাণ ফোটায় এহেন শিশুগুলোর জন্ম গ্রহন হয়ে থাকে। তবে এখনতো বাজারে সন্তান ধারণে জন্য ওষুধ রয়েছে, অনেক সময় দোকানদার বা পল্লী চিকিৎসার অজ্ঞতাবশতঃ ডিম্বাণু ফোঁটানোর ওষুধ প্রয়োগ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে একাধিক ওষুধ প্রয়োগ হওয়ায় একাধিক শিশুও জন্ম নেয়। তবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবীড় পর্যবেক্ষণ ছাড়াও এসব ওষুধ প্রয়োগ বা গর্ভধারণ করানো সঠিক পন্থা নয়, এতে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ২৫০ গর্ভধারণের মধ্যে ১টির যমজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে ট্রিপলেট বা ৩টা হওয়ার হার প্রতি ১০ হাজার গর্ভধারণের ১টিতে, ৪ জন হওয়ার হার আরও কম, প্রতি ৭ লাখে ১ জনের। তবে বর্তমানে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার হার বেড়ে যাওয়ার কারণে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।