• বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

গণবিজ্ঞপ্তি জারি সিটি কর্পোরেশনে পরিণত হচ্ছে বগুড়া

দীপক কুমার সরকার / ৪৬ Time View
Update : সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

 

বগুড়া পৌরসভাকে দেশের ১৩তম সিটি করপোরেশন হিসেবে পরিণত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন-২ শাখার নির্দেশনা মোতাবেক পৌর এলাকার মৌজাগুলোর অন্তর্ভুক্ত এলাকা নিয়ে বগুড়া সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা গত ২৭ এপ্রিল রবিবার এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয় এ বিষয়ে কারো মতামত বা আপত্তি থাকলে তা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের বরাবরে দাখিল কতে হবে। এদিকে পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করতে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ কতৃক জারীকৃত স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) প্রতিষ্ঠা বিধি মালা, ২০১০ এর ৪ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে সিটি কর্পোরেশনের মানদন্ড অনুযায়ী পৌর এলাকায় জসংখ্যা নূন্যতম ৪ লাখ হতে হবে।
বগুড়া জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠত হয় বগুড়া পৌরসভা। ১৯৮১ সালে পৌরসভা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পায়। ২০০০ সালে এর আয়তন ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। এরপর ২০০৪ সালে বর্ধিত করে ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার করা হয়। ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভায় জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০ লাখ।
বগুড়াবাসী উন্নয়নের স্বার্থে দীর্ঘদিন ধরে বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তরের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা গত ফেব্রুয়ারিতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সম্মতি দিলে বগুড়া সিটি করপোরেশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২০২২ জনশুমারী অনুযায়ী বগুড়া পৌরসভার স্থায়ী জনসংখ্যা ৪ লাখ ২২ হাজার ৯’শ জন। প্রকৃতপক্ষে এই পৌরসভায় ১০ লক্ষ মানুষের বসবাস। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩ হাজার হতে হবে। বগুড়া পৌরসভার জনসংখ্যার ঘনত্ব ৬ হাজার ৮০ টাকা। এছাড়াও প্রস্তাবিত এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বগুড়া। নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যমান পৌরসভার বার্ষিক আয় নূন্যতম ১০ কোটি টাকা হওয়ার কথা থাকলেও বগুড়া পৌর সভার বার্ষিক আয় ২০২৩-২৪ ছিলো ৬০ কোটি টাকা। আয়তনের দিক থেকে নূন্যতম আয়তন ২৫ বর্গকিলোমিটার প্রয়োজন হলেও বর্তমানে বগুড়া পৌরসভার আয়তন ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গ কিলোমিটার।
তাছাড়া সিটি কর্পোরেশন হওয়ার দিক থেকে বগুড়া অনেক দিক দিয়েই এগিয়ে বরিশাল, খুলনা এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের চেয়ে বগুড়া পৌর সভার আয়তন এবং লোক সংখ্যা বেশি। বগুড়াসহ ১১ টি জেলার গাড়ি চলাচল করে এই শহরের উপর দিয়ে। বগুড়া একটি গ্রোয়িং সিটি। গ্যাস, রাস্তা, মেডিকেল কলেজ দেশের অন্যতম বৃহৎ কলেজ রয়েছে এ জেলা শহরে।
বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বাদশা জানান, ২০০৬ সালে ১৮ অক্টোবর বিএনপির নেতৃত্বোধীন জোট সরকার পৌরসভার আয়তন ও ওয়ার্ড সংখ্যা বৃদ্ধি করে গ্যাজেট প্রকাশ করে। এর আয়তন করা হয় প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটার। মোট মৌজার সংখ্যা ৫৪ টি এবং ওয়ার্ড করা হয় ২১ টি। বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বগুড়া পৌরসভার আয়তন এবং ওয়ার্ড সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় সিটি কর্পোরেশন করার জন্য। তবে তিনি মেয়র থাকাকালে এ বিষয়ে একাধিক চিঠি দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে। বর্তমান জেলা প্রশাসকও চিঠি দিয়েছেন। এটি বগুড়াবাসীর ন্যায্য পাওনা। এর মূল রূপকার হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ইতোপূর্বে তিনি সব করে রেখেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ফ্যাসিস্ট সরকার এটি করেনননি। তিনি অবিলম্বে এটি ঘোষণা করার আহবান জানান এই বিএনপি নেতা।
উল্লেখ্য গত ১০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত একটি পত্র বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে এসেছে। ওই পত্রে বলা হয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে প্রাপ্ত পত্রের প্রেক্ষিতে বগুড়া পৌর এলাকায় সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) বিধিমালা, ২০১০ এর বিধি -৫ অনুযায়ী গণবিজ্ঞপ্তি জারি এবং এলাকার অধিবাসীদের মতামত/আপত্তি নিস্পত্তিপূর্বক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ফিরোজ মাহমুদ স্বাক্ষরিত পত্র এটি জানান হয়।
১৮৭৬ সালে বগুড়া পৌরসভা গঠিত হয়। সে সময় সুত্রাপুর, কাটনার পাড়া এবং শিববাটি মৌজা নিয়ে পৌরসভা গঠিত হয়। পরবর্তীতে এর আয়তন বেড়ে ১২ বর্গকিলোমিটার করা হয়। দীর্ঘদিন এই অবস্থায় ছিলো। সে সময় ওয়ার্ড ছিলো ১২টি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক ও পৌর সভার প্রশাসক মো. মাসুম আলী বেগ জানান, সিটি কর্পোরেশন করার জন্য যা যা প্রয়োজন বগুড়া পৌরসভার সব উপযোগিতা রয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। মতামত ও আপত্তি গ্রহণ এবং নিস্পত্তির পর প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, বগুড়ার বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সিটি কর্পোরেশন। গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ‘অভিযোগ ও আপত্তি থাকলে তা ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রতিবেদন আকারে পাঠানো হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্থানীয় সরকার বিভাগ যাচাই-বাছাই ও আইনগত দিক বিবেচনা করে বগুড়া সিটি করপোরেশন অধ্যাদেশ জারি করবে।’

 


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category